চাঁদাবাজী, যাত্রী হয়রানী সবই চলে....

পুলিশের নিরবতায় বেপরোয়া মইজ্জারটেকের অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা

Passenger Voice    |    ১০:৩৯ এএম, ২০২০-১১-০৯


পুলিশের নিরবতায় বেপরোয়া মইজ্জারটেকের অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা

জাহাঙ্গীর আলম বাবু: চলছে ভাড়া নৈরাজ্য, আছে যাত্রী হয়রানী, চালকদের দিতে হয় চাঁদা, যাত্রী টানা পাটিও রয়েছে চট্টগ্রাম নগরীর মইজ্জারটেক এলাকায় অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলাচলরত নিবন্ধন বিহীন সিএনজি অটোরিকশা গুলো পুলিশের নিরবতার সুযোগ নিয়ে ঢুকে পড়ছে চট্টগ্রাম নগরীর মইজ্জারটেক এলাকায়। হাইওয়েতে চলাচলের নিষেধ থাকলেও পটিয়া কলেজ বাজার হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে দাপিয়ে মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছে এই সিএনজি অটোরিকশা। 

দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই সিএনজি অটো-রিকশায় নেই কোন নিবন্ধন, চলাচলের পারমিটও নেই, মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রবেশের কোন সুযোগও নেই তাদের তবুও মালিক শ্রমিক নেতাদের কব্জির জোড়ে সড়কে চলছে এসব অবৈধ সিএনজি অটো-রিকশা ।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের নিদিষ্ট করা পার্কিং এর স্থানে সারি সারি দাড়িয়ে থাকা এই অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা গুলোর বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়না নগর ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। 

পটিয়া এলাকার নারী যাত্রী মেহজাবিন চৌধুরী প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বর্তমানে দেশের যে অবস্থা নারীরা কোন স্থানে নিরাপদ নই। এমনকি গণপরিবহন ব্যবহারে নারীদের কোন ধরনের নিরাপত্তা নেই। মইজ্জারটেক এলাকা থেকে পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা এলাকার যে সকল সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে এই সিএনজি গুলোর কোন রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার নেই। এই গাড়ি গুলোতে নারী যাত্রীদের যদি কোন ধরণের যৌন হয়রানী করা হয় অথবা কাউকে অপহরনের চেষ্টা করা হয় সে ক্ষেত্রে কোন অভিযোগ করারও সুযোগ নেই এই গাড়ি গুলোর বিষয়ে। 

আনোয়ারা এলাকার স্থানীয় বাসিন্ধা পল্লী ডাক্তার লোকমান হোসেন বলেন, নিবন্ধন বিহীন এই গাড়ি গুলোতে হরহামেশায় বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মাদকের বিস্তার হয় এই গাড়ি গুলো ব্যবহার করে। নিবন্ধন না থাকায় মাদকের চালান বহন করলেও কেউ পুলিশকে জানাতে পারে না। ট্রাফিক পুলিশ সামান্য টাকার লোভে যাত্রী সাধারণকে যুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।   

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক তৌহিদুল হোসেন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, নিবন্ধন বিহীন কোন যান সড়কে চলাচলের অনুমতি নেই। সিএনজি অটোরিকশা সড়কে চলাচল করতে হলে অবশ্যই নিবন্ধন গ্রহন করতে হবে। সাথে ফিটনেস ও রুট পারমিট আপডেট থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিআরটিএর নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এইসব অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার বিরুদ্ধে। 

অনুসন্ধান বলছে, আনোয়ারা, চৌমুহনী, চন্দনাইশ এলাকা থেকে প্রতিদিন নগরীর মইজ্জারটেক স্ট্যান্ডে আসে প্রায় ৩০০ সিএনজি অটোরিকশা, সাতকানিয়া,বাঁশখালী, চাঁনখালী থেকে আসে প্রায় ১২০ টি সিএনজি এছাড়াও বোয়ালখালী, শান্তিরহাট, পটিয়া এলাকা থেকে আসে আরো প্রায় ৫০০ সিএনজি অটো রিকশা। এই গাড়ি গুলোর বেশিরভাগ গাড়ির কোন নিবন্ধন নেই। 

আরো পড়ুন >>>> এখনও হাতের ইশারায় চলে চট্টগ্রাম নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা

রেজিষ্ট্রেশন ব্যতীত মোটরযান চলাচলের বিষয়ে সড়ক পরিবহন আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আইনে বলা আছে রেজিষ্ট্রেশন ব্যতীত মোটরয়ান চালনা করা বা চালনার অনুমতি দেওয়া ব্যক্তির অনধিক ৬ মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে। এছাড়া একই আইনের ৭৭ নং ধারায় বলা আছে রুট পারমিট ব্যতীত পরিবহন যান চালনা করা বা চালনার অনুমতি দেওয়া অনধিক ৩ মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে শাস্তির বিষয়।  কিন্তু সড়ক পরিবহন আইনের তোয়াক্কা করছে না মালিক-শ্রমিক নেতারা, অসাধু কতিপয় ট্রাফিক পুলিশের কারনে এই এলাকায় আইনের বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। 

দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই রুট গুলো এখনও দুই লোনের । এই রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করলেও সড়কটি ভাঙ্গাচুরা ও ঝুঁকিপূর্ণ, প্রায় সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। সাধারণ যাত্রী সাধারণ বলছে ট্রাফিক পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা যদি বিষয়টি একটু নজর দিয়ে এই সব অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তাহলে যেমন দুর্ঘটনার আশংখা কমে যাবে অন্যদিকে যানজট ও জনজট কমে শ্রমজীবি মানুষের কর্মঘন্টার বাঁচবে। 

মইজ্জারটেকের এই সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে প্রতি গাড়ি প্রতি মালিক শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন লাঠিয়াল বাহিনী চাঁদা তোলে থাকেন বলে বেশ কয়েকজন সিএনজি অটো রিকশার চালকরা নিশ্চিত করেছেন। এই সিএনজি অটোরিকশা থেকে গাড়ি প্রতি প্রতিদিন ২০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হয় পুলিশ ও মালিক শ্রমিক নেতাদের নামে। প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার সিএনজি থেকে ২০ হাজার টাকা করে যা মাসে ৬ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজী হয়ে থাকে।  এছাড়াও প্রতিমাসে হাইওয়ে পুলিশের জন্য গাড়িপ্রতি ৫০০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হয়। 

আরো পড়ুন >>> সড়ক আইনের জরিমানা কমিয়ে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সফটওয়্যার হালনাগাদ

এ ব্যাপারে জানতে হাইওয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম জোনের সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম সিকদার প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, হাইওয়েতে চলাচলরত ছোট যানবাহন গুলোর বিরুদ্বে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এছাড়া এই জায়গা গুলোতে গাড়ি চললে আমরা ব্যবস্থা নিবো।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখ্যপাত্র অতিরিক্ত উপ-পলিশ কমিশনার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, আমি বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানাচ্ছি তারা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে।